সিরিয়ায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার ধ্বংসযজ্ঞ, বিশেষ করে লাতাকিয়া বন্দরের ঘটনা, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর থেকে দেশটিতে হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে ইসরায়েল। আসাদের রাশিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের পর থেকেই ইসরায়েলের এই তৎপরতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। গত কয়েকদিনে সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে চার শতাধিক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
হামলার মূল কারণ
ইসরায়েল দাবি করছে, সিরিয়ায় তাদের অভিযান মূলত ইরানের সামরিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করার জন্য। যদিও ইরান বরাবরই সিরিয়ায় সামরিক উপস্থিতি থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। ইসরায়েলের ভাষ্যমতে, তারা সিরিয়ার অস্ত্রাগার এবং সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করে সেগুলো সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে পড়া ঠেকাতে চায়।
তবে অনেক বিশ্লেষকের মতে, ইসরায়েলের আসল উদ্দেশ্য আরও গভীর। সিরিয়ার দুর্বল পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে ইসরায়েল অঞ্চলটিতে কৌশলগত প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে।
হামলার স্থান ও কৌশল
ইসরায়েল সিরিয়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- সামরিক ঘাঁটি
- অস্ত্রাগার
- বিমানবন্দর
- নৌঘাঁটি
- গবেষণা কেন্দ্র
বিশেষ করে গোলান মালভূমি অঞ্চলে ইসরায়েলি ট্যাংক এবং সাঁজোয়া যান প্রবেশের ঘটনা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘের অস্ত্রবিরতি চুক্তির আওতায় এই অঞ্চলকে নিরস্ত্রীকরণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু বাশার সরকারের পতনের পর থেকে ইসরায়েল ৪০০ বর্গকিলোমিটার বাফার জোন দখলে নিয়েছে।
সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের অভিযোগ
সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, ইসরায়েলের সেনারা রাজধানী দামেস্কের কাছাকাছি কাতানা এলাকায় পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। তবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, গোলান মালভূমি এবং এর সংলগ্ন অঞ্চলগুলো চিরতরে ইসরায়েলের অংশ হিসেবে থাকবে। এই অবস্থান আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইসরায়েলের কৌশলগত লক্ষ্য
ইসরায়েলের প্রকৃত উদ্দেশ্য এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। সরকার শুধু বলছে, এটি ‘ইসরায়েলের প্রতিরক্ষার স্বার্থে’ করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ইসরায়েল কৌশলগতভাবে সিরিয়াকে টুকরো টুকরো অঞ্চলে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে।
ইসরায়েলের ন্যাশনাল ইউনিটি পার্টির নেতা বেনি গানৎস সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছেন, সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ইসরায়েলের উচিত দ্রুজ, কুর্দি, এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহল ইসরায়েলের এই আগ্রাসনকে তীব্র সমালোচনা করেছে। তবে পশ্চিমা শক্তিগুলো ইসরায়েলের প্রতি নমনীয় ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সিরিয়ায় ইসরায়েলের এই হামলার ভবিষ্যৎ প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা জোরালো হচ্ছে। বিশেষত, অঞ্চলটি ভেঙে নতুন রাজনৈতিক এবং সামরিক ভারসাম্য গড়ে উঠতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
এ নিয়ে আপনার মতামত জানাতে আমাদের ফেসবুক পেজে শেয়ার করুন। আরও খবর পেতে আমাদের ফলো করুন।
সূত্র: আল-জাজিরা