যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালানোর ঘটনায় ইউক্রেনের কড়া সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। টাইম ম্যাগাজিন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এই পদক্ষেপকে ‘পাগলামি’ বলে অভিহিত করেছেন এবং এতে তাঁর তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন।
‘পাগলামি’ বললেন ট্রাম্প
টাইম ম্যাগাজিনের ২০২৪ সালের ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে নির্বাচিত ট্রাম্প তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেছেন,
‘রাশিয়ার কয়েকশ মাইল গভীরে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এটি যুদ্ধের উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলছে। আমরা কেন এই সংঘাতকে আরও জটিল করছি? এটি বন্ধ হওয়া উচিত।’
ট্রাম্পের এই মন্তব্য ইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রেক্ষাপট
বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি ইউক্রেনকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলার অনুমতি দেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বারবার অনুরোধের পর বাইডেন এই সিদ্ধান্ত নেন, যা তাঁর প্রশাসনের শেষ বড় সিদ্ধান্তগুলোর একটি। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার ১৫ হাজার সেনাকে যুদ্ধে নিয়োগ দেওয়ায় বাইডেন তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছিলেন।
এই হামলা বাইডেন প্রশাসনের যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের মনোবল বাড়ানোর কৌশলের অংশ হলেও ট্রাম্প একে ‘যুদ্ধের উত্তেজনা বাড়ানোর’ পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন।
ট্রাম্পের যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি
২০ জানুয়ারি ট্রাম্প নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। টাইম ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন,
‘আমি দ্রুত এই যুদ্ধের সমাপ্তি চাই। আমার কাছে চমৎকার একটি পরিকল্পনা আছে। তবে এখন তা প্রকাশ করলে সেটি কার্যকর হবে না।’
যুদ্ধ বন্ধের জন্য তিনি একটি শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানোর কথা বলেছেন, তবে ইউক্রেনকে পরিত্যাগ করার কোনো ইঙ্গিত দেননি।
কিয়েভের শঙ্কা
ট্রাম্পের যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি নিয়ে কিয়েভের উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। তারা আশঙ্কা করছে, চুক্তির বেশির ভাগ সুবিধা রাশিয়ার দিকে ঝুঁকতে পারে।
মস্কোর অগ্রগতি এবং যুদ্ধের ভবিষ্যৎ
রাশিয়া এবং পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধ এখন সবচেয়ে ভয়াবহ ধাপে প্রবেশ করছে। যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার সেনারা দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের পরিকল্পনা কেমন হবে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সহায়তা হিসেবে আরও ৯৮ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম অনুমোদন করেছে। কিন্তু ট্রাম্পের নেতৃত্বে এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
মানবিক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে ট্রাম্পের হতাশা
সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প যুদ্ধের মানবিক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে গত মাসে হতাহতের সংখ্যা দেখে তিনি ‘স্তম্ভিত’ হয়েছেন। তিনি বলেন,
‘উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলছি। একটি চুক্তিতে পৌঁছানো উভয়ের জন্যই ভালো হবে।’
পরিস্থিতির পর্যালোচনা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন বিষয়ে তার পূর্বের নীতি থেকে সরে আসতে পারে। তবে ট্রাম্পের নীতির পরিবর্তন কেবল যুদ্ধের গতিপথ নয়, আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
আপনার মতামত জানাতে আমাদের ফেসবুক পেজে শেয়ার করুন। আরও খবর পেতে ফলো করুন।
সূত্র: রয়টার্স